প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বনবীর ভবিষ্যদ্বাণী

প্রযুক্তির উৎকর্ষ পৃথিবীকে অনেক দূর এগিয়ে নিচ্ছে। দিন দিন সহজ হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। কিয়ামতের আগে পৃথিবী কতটা উন্নত হবে, তা অনুমান করা দুষ্কর। তবে রাসুল (সা.)-এর কিছু হাদিস থেকে বোঝা যায়, কিয়ামতের আগে পৃথিবী প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না হিংস্র প্রাণী মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, যে পর্যন্ত না কারো চাবুকের মাথা এবং জুতার ফিতা তার সঙ্গে কথা বলবে এবং তার ঊরুদেশ বলে দেবে তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবার কী করেছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৮১)

উল্লিখিত হাদিসে রাসুল (সা.) তিনটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যেগুলো অনেকটাই বাস্তবতার মুখ দেখছে। আজ আমরা এই প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

বোলিংগুয়াল বার্ক ট্রান্সলেটর : এটি মূলত কুকুরের ঘেউঘেউ থেকে ভাষায় রূপান্তর করে তার মনের ভাব বোঝার একটি প্রযুক্তি। গিজবট ডটকমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, নর্দান অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্নোবোডচিকফ এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ তিন দশক গবেষণা করে চলেছেন।

এরই মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে এই প্রযুক্তি আবিষ্কারে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বিজ্ঞানীরা। ফুরবোর (ঋঁত্নড়) ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, একটি বিশেষ ক্যামেরার মাধ্যমে কুকুরের সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করা যাবে। পোষা প্রাণীটি ঠিক কী করতে চাচ্ছে, সেটি রিয়েল টাইমে ভাষান্তর করে বোঝাবে ক্যামেরা। ব্যবহারকারীর কুকুরের ওপর নজর রাখতে ক্যামেরাটি হালচাল ধারণ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিশ্লেষণ করে মালিককে সংকেত পাঠাবে।

কুকুরকে নজরে রাখতে ফুরবো অনেক আগে থেকেই ক্যামেরা বানাচ্ছে। কিন্তু এমন চমকপ্রদ ফিচার এই প্রথম যোগ করল তারা।

এই প্রযুক্তি আরো উন্নত হলে একসময় বাঘ, সিংহের মতো হিংস্র পশুর ভাষাও মানুষ বুঝতে সক্ষম হবে এবং তাদের সঙ্গে কথোপকথন করতে পারবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন স্বয়ংক্রিয় ঘাতক অস্ত্র : রাসুল (সা.)-এর হাদিসের একটি জায়গায় বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের চাবুকের মাথা তার সঙ্গে কথা বলবে ততক্ষণ কিয়ামত হবে না। অর্থাৎ কিয়ামতের আগে বিশ্ব প্রযুক্তিগতভাবে এত দূর এগিয়ে যাবে যে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে। রাসুল (সা.)-এর এই ভবিষ্যদ্বাণীও অনেকটা সত্য হয়েছে। এরই মধ্যে এমন একটি যোদ্ধা রোবট আবিষ্কৃত হয়েছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু রাষ্ট্র এ ধরনের অস্ত্র তৈরির কথা ফাঁস হয়েছে। ২০১৫ সালে একটি কারখানায় স্বয়ংক্রিয় এক রোবটের হাতে কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

পরবর্তীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন স্বয়ংক্রিয় ঘাতক অস্ত্র মানব সভ্যতার জন্য হুমকির কারণ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এক হাজার প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও গবেষক। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক, উদ্যোক্তা এলান মাস্ক, এমআইটির অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি, গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান ডেমিস হ্যাসাবিস প্রমুখ।

স্মার্ট জুতা : রাসুল (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, মানুষের জুতার ফিতা তার সঙ্গে কথা বলবে। এরই মধ্যে পুরুষদের জন্য ইলেকট্রনিক স্পোর্টস শু-এর দ্বিতীয় সংস্করণ চলে এসেছে বাজারে।

এই জুতায় এমন সব যন্ত্রাংশ আছে যা দিয়ে কতটা পথ অতিক্রম করা হয়েছে, কতটা পরিশ্রম হয়েছে—এমন সব তথ্য পাওয়া যাবে। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন জুতায় আগের থেকে আরো ভালো সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে আরো নিখুঁত তথ্য দেবে এই জুতা। এ ছাড়া এর সঙ্গে শাওমির ‘মি ফিট’ অ্যাপের লিংক করিয়ে জানা যাবে ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য। এ ছাড়া কিছু স্মার্ট জুতা বাজারে এখন এসেছে যেগুলো পায়ের মাপ বুঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জুতার ফিতা বেঁধে দেওয়া, প্রয়োজনে ঢিলে করার কাজ করতে পারে।

অ্যান্টি-রেপ ডিভাইস : রাসুল (সা.) বর্ণিত হাদিসের শেষাংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এবং তার ঊরুদেশ বলে দেবে তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবার কী করেছে।’ এই প্রযুক্তি কতটা উন্নত হবে তা অনুমান করা কঠিন। তবে মনে হয় রাসুল (সা.)-এর হাদিসের যথার্থ ব্যাখ্যা পেতে হলে আমাদের প্রযুক্তিকে আরো অনেক দূর এগোতে হবে।

অবশ্য এরই মধ্যে এর কাছাকাছি একটি প্রযুক্তি বিশ্বে চলে এসেছে। এমআইটির একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন এমন একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে কোনো নারীকে কেউ যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ করার চেষ্টা করলে তার আশপাশের মানুষদের সতর্ক করবে। এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই নারী সফটওয়্যারটি অফ করতে সক্ষম না হলে সফটওয়্যারে সেট করা নাম্বারগুলোতে কল চলে যাবে এবং মোবাইলের মাধ্যমেই তার পরিবার বা বন্ধুরা সেই নারীর লোকেশন জানতে পারবে, এবং মোবাইলের স্পিকার অন হয়ে যাওয়ায় সেখানকার কথোপকথনসহ সব পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাবে। নব-উদ্ভাবিত এই সেন্সরটি নারীদের আন্ডার গার্মেন্টে সেট করা থাকবে। (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডটকম, ভিডিও দেখতে : shorturl.at/bGMPU)

যেহেতু পুরুষ মানুষরা তাদের মোবাইল ফোন প্যান্টের পকেটেই রাখে এবং তার অবস্থান বেশির ভাগ সময় ঊরুর ওপরই হয়, সেহেতু বলা যায় পরিবার বিপদে পড়লে তার মোবাইলে যাওয়া নোটিফিকেশন তার ঊরুতেই ভাইব্রেশন করবে। তবে রাসুল (সা.)-এর হাদিস পড়ে মনে হচ্ছে, রাসুল (সা.) যে প্রযুক্তির দিকে ইঙ্গিত করেছেন, তা আসতে এখনো অনেক দেরি।